বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিতে আগ্রহী ইতালি। সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সীমিত পরিসরে বাংলাদেশিদের জন্য পুনরায় ভিজিট (ভ্রমণ) ভিসা চালু করেছে।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন ইতালিতে বাংলাদেশের বহু লোক কাজ করেন। আমাদের নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়- সেই বিষয়ে আজ আলাপ হয়েছে। ওখানে আমাদের যারা কাজ করছেন, তারা যেন ভিসা নিয়ে প্রোপার চ্যানেলে ওখানে যান, তারা সেই বিষয়ে বলেছেন।
উপদেষ্টা বলেন, অনেকে আছেন সৌদি আরব কিংবা লিবিয়া বা অন্য কোনো দেশের ভিসা নিয়ে গেলেন, ওখান থেকে ইতালির ভিসা না নিয়ে আবার সেখানে (ইতালি) গেলেন। তারা বলেছেন, এটা যেন না করেন, বাংলাদেশ থেকে যেন প্রোপারলি ভিসা নিয়ে (ইতালি) যান। ওনারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি লোক নিতে আগ্রহী। কিন্তু বলেছেন, প্রোপারলি (যথাযথভাবে) যেন বাংলাদেশ থেকে ভিসা নিয়ে যান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তারা বলেছেন বাংলাদেশি লোকরা ভালো কাজ করেন। তারা কঠোর পরিশ্রমী। তারা ইতালির অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের অবদান রেখে যাচ্ছেন।
ইতালিতে কী পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক আছে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, প্রকৃত সংখ্যাটা তো আমি বলতে পারব না। শুনেছি সেখানে লাখ খানেক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। ওনারা নতুন করে লোক নেবে, তবে প্রোপার চ্যানেলে যেতে হবে।
ইতালিতে অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ব্যাপারে ওনারা খুব একটা প্রশ্ন ওঠাননি। এখন আপনারা বলতে পারবেন অবৈধ আছে কি না। ওই দেশের ভিসা না নিয়ে সেখানে গেলে তো সে অবৈধ হয়ে যায়। তারপরও আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, এভাবে যারা গেছে তাদেরও যেন বৈধতা দিয়ে দেয়।
ইতালির সঙ্গে কোনো সমঝোতা সই হবে কি না- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা চুক্তি আমাদের আছে, ওটা আরও জোরদার করা হতে পারে, সেটা এখনো হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা তাদের একটা অনুরোধ করেছি- পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিজিবি সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য, তারা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা সহযোগিতা বৃদ্ধি করবেন। সহযোগিতার মূল বিষয়টি হলো সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ।
এদিকে সীমিত পরিসরে বাংলাদেশিদের জন্য পুনরায় ভিজিট (ভ্রমণ) ভিসা চালু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দুই দেশের মধ্যে টেকসই কূটনৈতিক যোগাযোগের পর বাংলাদেশিদের পুনরায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি ভিসা ইস্যু করছে ইউএই।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আল হামুদি জানান, ঢাকার সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা দিচ্ছে।
রোববার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে এসব কথা জানান ইউএই রাষ্ট্রদূত। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে লুৎফে সিদ্দিকীর সক্রিয় সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন। যার মধ্যে ভিসা সুবিধা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ সহযোগিতা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে অর্ধডজনেরও বেশি মন্ত্রিপর্যায়ের সফর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিশেষ দূতকে রাষ্ট্রদূত জানান, ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা দিচ্ছে। ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের জন্য বাল্ক ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ত্বরান্বিত করা হয়েছে, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং বাণিজ্যিক বিনিময় বৃদ্ধি করেছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মসংস্থান ভিসার জন্য অনলাইন সিস্টেম পুনরায় চালু করেছে। সম্প্রতি মার্কেটিং ম্যানেজার ও হোটেল কর্মীদের মতো পেশাদারদের জন্য ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য ৫০০টি ভিসা ইতোমধ্যে ইস্যু করা হয়েছে, আরও ১ হাজারটি অনুমোদিত হয়েছে ও শিগগিরই ইস্যু করার জন্য নির্ধারিত রয়েছে।